| |
               

মূল পাতা জাতীয় বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার আসার পর সকল উন্নয়নের কাজ থমকে যায় : প্রধানমন্ত্রী


বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার আসার পর সকল উন্নয়নের কাজ থমকে যায় : প্রধানমন্ত্রী


রহমত নিউজ     13 September, 2023     01:45 PM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছর এবং সামরিক সরকারের পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ মন্দার কবলে পড়েছিল। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। সুচিন্তিত এবং পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার আসার পর সকল উন্নয়নের কাজ থমকে যায়। ২০০৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আমরা দেশকে সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমরা স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে দেশ গঠনের কাজে মনোনিবেশ করি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সরকারের ধারাবাহিকতা এবং পরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মসূচি দ্রুত বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির একটি। জিডিপিতে আমরা বিশ্বের ৩৫তম, ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ২০তম জিডিপির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে।

আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘কমনওয়েলথ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ফোরাম ২০২৩’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ও কমনওয়েলথ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কমনওয়েলথ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড ফোরামের চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি আঘাত হানার পূর্বের এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল সাত শতাংশেরও বেশি। এমনকি করোনা মহামারির সময় যখন বহু দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক, তখনও আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫১ শতাংশ। এটি আমাদের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতারই প্রমাণ বহন করে। ২০০৬ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা পৌনে আট গুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শুধু জিডিপি বৃদ্ধিই নয়, বাংলাদেশে গত দেড় যুগে দৃশ্যমান বহুমাত্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ার পরও আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। চাল, সবজি, ফল, মাছ, মাংস এবং ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশেগুলোর একটি। গত প্রায় ১৫ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ থেকে ১৮.৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৫৯ বছরে থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। এই সময়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২,৭৬৫ মার্কিন ডলার। আমরা স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছি।

তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্য অর্জনের পর আমরা কাজ করছি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত স্মার্ট দেশে এবং ২১০০ সালের মধ্যে টেকসই বদ্বীপে পরিণত হওয়ার। সে লক্ষ্যে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন, আমাদের প্রয়োজন অধিকতর টেকসই বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বিকাশের পূর্বশর্ত হিসেবে আমার সরকার যে কার্যক্রমগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করেছে, তা হলো সাংগঠনিক সংস্কার, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ গঠন, বিনিয়োগকারীদের জন্য আকষর্ণীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং বিনিয়োগ পরবর্তী সেবা নিশ্চিতকরণ। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রায় সকল খাতই উন্মুক্ত। তবে এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুত, চিকিৎসা উপকরণ, গাড়ি ও জাহাজ নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তিসহ অনেক খাতে অধিক বিনিয়োগ করা যেতে পারে। এ সকল খাতে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি ব্যবসা হতে উদ্ভূত লাভ/ডিভিডেন্ড নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিডা অনলাইনভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছে। এর মাধ্যমে ২৬টি সংস্থার ৭৮টি সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন। এজন্য আমরা সমগ্র দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ১০৯টি হাইটেক এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ এবং ইনকিউবিউশন সেন্টার স্থাপন করছি। যেখানে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। আমাদের সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে। দেশের প্রায় সকল মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে বা হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা সরাসরি রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে শিগগিরই ঢাকার সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে শুধু বাংলাদেশেই না, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল চালু হবে শিগগিরই। চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ঢাকায় গত বছর মেট্রোরেলের একাংশ এবং কয়েকদিন আগে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ উদ্বোধন করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব অবকাঠামোর পুরো অংশ চালু হলে ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এক সময় বিদ্যুতের অভাবে সাধারণ গ্রাহক তো বটেই, কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতো। এখন দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। ২০০৬ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩,৭৮২ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫,২২৭ মেগাওয়াট। জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। ভাসমান টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।